নিজস্ব প্রতিবেদক, পঞ্চগড়:
পঞ্চগড়ের মিলগেট ইসলামপুর এলাকায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে একটি নাম—জুলেখা বেগম। দুই সন্তানের জননী এই গৃহবধূ নিজের সাজানো সংসার, স্বামী ও সন্তানদের মায়া ত্যাগ করে এখন অবস্থান করছেন প্রেমিকের বাড়িতে। দাবি একটাই—বিয়ে করতে হবে। সিনেমার গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়। বিবাহিত নারীর এমন পদক্ষেপ এবং নেপথ্যে বেরিয়ে আসা ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার লোমহর্ষক কাহিনী এলাকাবাসীকে হতবাক করে দিয়েছে।
স্বামী ও দুই সন্তান রেখে প্রেমের টানে
ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে ধর্ষণের নাটক? শরীয়তপুরের ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঘটনার সূত্রপাত বা বর্তমান পরিস্থিতি যতটা নাটকীয় মনে হচ্ছে, এর পেছনের গল্পটি ততটাই বেদনাদায়ক। জুলেখা বেগম নিজের দীর্ঘদিনের সংসার ছেড়ে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন বিয়ের দাবিতে। স্বামীর ঘর ছেড়ে সরাসরি পরকীয়া প্রেমিকের বাড়িতে এমন প্রকাশ্য অবস্থান সচরাচর দেখা যায় না, যা দেখে প্রথমে অনেকেই বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়া মাত্রই প্রেমিক বাবু মিয়া বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা জুলেখা। তিনি বাবু মিয়ার বাড়িতেই অনশন শুরু করেছেন। তার পরিষ্কার কথা, “বাবু আমার সব শেষ করে দিয়েছে, এখন ও আমাকে বিয়ে না করলে আমি কোথায় যাব? আমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।” জুলেখা জানান, পরকীয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তার স্বামী স্বপন আলী তাকে আর গ্রহণ করতে রাজি নন। তাই এখন বাবুকেই তার দায়িত্ব নিতে হবে। এই দাবিতে গত তিন দিন ধরে প্রেমিকের বাড়িতেই অবস্থান করছেন তিনি।
নেপথ্যের কালসাপ: গোপন ভিডিও ও ব্ল্যাকমেইল
জুলেখার এই বেপরোয়া সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে এক অন্ধকার অধ্যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২১ সালে। জুলেখার প্রতিবেশী এবং স্থানীয় একটি কাপরের দোকানের কর্মচারী বাবু মিয়া অত্যন্ত কৌশলে জুলেখার গোসলের ভিডিও গোপনে ধারণ করেন। সেই ভিডিও পুঁজি করেই শুরু হয় জঘন্যতম ব্ল্যাকমেইল।
লোকলজ্জার ভয় দেখিয়ে এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বাবু মিয়া জুলেখার সাথে জোরপূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এটি কেবল শারীরিক সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অভিযোগ উঠেছে, জুলেখাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন এনজিও থেকে কয়েক লাখ টাকার ঋণও তুলে নিয়েছেন বাবু। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, একটি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বেও গন্ডগোল হয়েছিল, যা এলাকার অনেকেই জানতেন। দীর্ঘ এক বছর ধরে বিষয়টি ধামাচাপা থাকলেও অবশেষে তা প্রকাশ্যে আসে, আর তখনই বাধে বিপত্তি।
পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে স্বামীকে রেখে
ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে শুরু হওয়া সম্পর্কটি একপর্যায়ে আসক্তিতে বা অনিয়ন্ত্রিত পরকীয়ায় রূপ নেয় বলে ধারণা স্থানীয়দের। গত এক বছর ধরে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হতে থাকলে জুলেখার সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। স্বামী স্বপন আলীর সাথে জুলেখার বিবাদ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
স্বামীর সংসারে যখন টেকা দায়, তখন জুলেখা বাধ্য হয়েই বাবু মিয়ার বাড়িতে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে জুলেখার এক প্রতিবেশী জানান, “সম্পর্কটা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমাদের নজরে আসে। তবে এর আগে থেকে চলছে কি না, তা আমরা জানি না। যেহেতু মেয়েটির সম্মান নষ্ট হয়ে গেছে এবং তার স্বামী তাকে আর ঘরে তুলবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাই সে প্রেমিকের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে।”
জুলেখার স্বামী স্বপন আলীও নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, পরকীয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এবং স্ত্রী অন্য পুরুষের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর, তাকে আর ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। স্বপন আলীর ভাষ্য, “আমার বাড়ি বাবুদের বাসায়, আমি ওর (জুলেখা) সাথে আর সংসার করব না।”
পরকীয়ার পরিণতি
পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ মিলগেট ইসলামপুরের এই ঘটনা। বর্তমানে জুলেখার অবস্থা “না ঘরকা, না ঘাটকা”। একদিকে স্বামী তাকে পরিত্যাগ করেছেন, অন্যদিকে প্রেমিক বাবু মিয়া পালাতক। শুধু তাই নয়, প্রেমিকের বাড়িতেও জুলেখা নিরাপদ নন।
বাবু মিয়ার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জুলেখাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। জুলেখা অভিযোগ করেন, “গত তিন দিন ধরে আমার ওপর অত্যাচার চলছে। আমাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, আমি দম নিতে পারছি না। আমার দুটি সন্তান শেষ হয়ে গেল, আমিও শেষ হয়ে গেলাম। এখন বাবু আমাকে বিয়ে করুক বা না করুক, আমাকে এখান থেকে লাশ হয়ে বের হতে হবে কারণ আমার আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।”
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও এলাকাবাসীর কৌতূহল
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাবু মিয়ার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন শত শত উৎসুক জনতা। সবার মনে একটাই প্রশ্ন—কী হবে এই ঘটনার সমাধান? একটি ভিডিওর সূত্র ধরে ব্ল্যাকমেইল, এরপর পরকীয়া, অর্থ আত্মসাৎ এবং অবশেষে দুটি পরিবারের ভাঙন। জুলেখার আর্তনাদ আর অনশন এলাকার বাতাস ভারী করে তুলেছে।
সামাজিকভাবে বিষয়টি কীভাবে সুরাহা হবে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে দিনশেষে পরকীয়ার এই করাল গ্রাসে বলি হলো দুটি সাজানো সংসার এবং জুলেখার দুটি নিষ্পাপ সন্তানের ভবিষ্যৎ। প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে কী পদক্ষেপ নেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

