৫ বছরের প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক, শেষে প্রতারণা?

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভালোবাসার সম্পর্ক সব সময় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। সেই বিশ্বাস যখন ভেঙে যায়, তখন তৈরি হয় এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির। এমনই এক ঘটনার সাক্ষী হলো এলাকাবাসী। “তোরে ভালোবেসে মন প্রাণ সবই দিয়েছি, হঠাৎ একদিন তুই দিয়ে গেলি বাঁশ”—কথিত এই আবেগী আর্তনাদ এখন ঘুরপাক খাচ্ছে কলেজ শিক্ষার্থী হাফিজার মনে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর প্রেমিক শুভর পরিবারের পক্ষ থেকে যখন প্রত্যাখ্যান আর গোপন বিয়ের আয়োজন করা হয়, তখন ভালোবাসার দাবি আদায়ে প্রেমিকের বাড়িতেই আমরণ অনশন শুরু করেছেন প্রেমিকা হাফিজা।

ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। একদিকে প্রেমিকার দাবি, অন্যদিকে প্রেমিকের পরিবারের কঠোর প্রত্যাখ্যান—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে।

৫ বছরের সাজানো স্বপ্ন ও হঠাৎ ছন্দপতন

হাফিজা এবং শুভ—দুজনেই কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। স্কুলজীবন থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত তাদের এই সম্পর্কের বয়স প্রায় পাঁচ বছর। দুজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল একসঙ্গে ঘর বাঁধার। হাফিজার ভাষ্যমতে, তাদের সম্পর্কটি কেবল মানসিক বা মৌখিক ছিল না, বরং তাদের মধ্যে শারীরিক ঘনিষ্ঠতাও ছিল। শুভ নিজেই সম্পর্কটি চূড়ান্ত করতে চেয়েছিলেন এবং তার পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ করেই শুভর পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের দাবি, হাফিজার নাকি একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এমন “চরিত্রহীন” মেয়েকে তারা কখনোই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেবেন না। কেবল তাই নয়, হাফিজাকে অন্ধকারে রেখে গোপনে শুভর বিয়েও ঠিক করে ফেলে তার পরিবার। এই খবর কানে পৌঁছানো মাত্রই নিজের অধিকার আদায়ে শুভর বাড়িতে ছুটে যান হাফিজা।

প্রেমিকের পরিবারের অভিযোগ ও পাল্টা যুক্তি

শুভর পরিবারের পক্ষ থেকে হাফিজার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। শুভর বোনের দাবি, হাফিজা তার ভাইকে ব্ল্যাকমেইল বা ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আমার ভাইয়ের সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক ছিল না। এটা একটা মিথ্যা বানোয়াট গল্প দিয়ে সে এখানে এসেছে। মেয়েটি এত জঘন্য যে, আমাদের পরিবারকেও হেয় করার চেষ্টা করছে। এর আগেও ওর অনেক ছেলের সঙ্গে রিলেশন ছিল, এখন আমার ভাইকে ফাঁসাতে এসেছে।”

শুভর বোন আরও দাবি করেন, তাদের কাছে হাফিজার সম্পর্কের কোনো ডকুমেন্ট বা প্রমাণ নেই। শুভ নিজেই নাকি বলেছেন, তিনি এই মেয়েকে বিয়ে করবেন না।

অন্যদিকে, হাফিজা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলেন, “শুভ আমাকে আসতে বলেছে বলেই আমি এসেছি। ও আমাকে বলেছিল, তুমি যেভাবে সংসার করতে চাও, চলে এসো। কিন্তু এখানে আসার পর ওর বাবা-মা আমার গায়ে হাত তুলেছে, আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।”

মারধর ও শুভকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

ঘটনার দিন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শুভর পরিবার হাফিজাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাফিজা জানান, শুভর বাবা-মা তাকে রুমে আটকে নির্যাতন চালিয়েছেন। এমনকি শুভ যখন পরিস্থিতি সামাল দিতে আসেন, তখন তাকেও জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়।

হাফিজার দাবি, “শুভকে ওরা আমার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। শুভকে কোথায় রাখা হয়েছে, তা কেউ জানে না। ওরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু আমি আমার অধিকার না নিয়ে এখান থেকে যাব না।”

তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছে শুভর পরিবার। শুভর বোন বলেন, “আমাদের কেউ তাকে মারধর করেনি। সে বারান্দায় ছিল, আমার চাচিরা তাকে বাইরে যেতে বলেছিল। আমার বাবা-মা অসুস্থ, তাই আমরা কেবল তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছি, কোনো গায়ে হাত তোলা হয়নি।”

নিখোঁজ প্রেমিক ও জনমনে প্রশ্ন

ঘটনার পর থেকে প্রেমিক শুভকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। হাফিজার দাবি, পরিবার তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে লুকিয়ে রেখেছে যাতে তাদের বিয়ে না হতে পারে। এলাকাবাসীও শুভর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। ঘটনার ৬ দিন পার হয়ে গেলেও দুই পরিবারের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি।

গ্রামের মানুষজন বলছেন, বিষয়টি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। কেউ কেউ মেয়ের সাহসিকতার প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ ছেলের পরিবারের সম্মানের কথা ভাবছেন। তবে শুভকে জনসমক্ষে না আনা পর্যন্ত প্রকৃত সত্য জানা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অনশন ও আত্মহত্যর হুমকি: পরিণতি কোন পথে?

বিগত ছয় দিন ধরে শুভর বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন হাফিজা। খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছু ছেড়ে তিনি এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। হাফিজা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, “আমি ন্যায্য বিচার চাই এবং আমি ওকে বিয়ে করব। আর যদি বিয়ে করতে না পারি, তবে নিজেকে শেষ করে দেব। আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”

প্রেমের স্বীকৃতি আদায়ের এই লড়াইয়ে হাফিজা এখন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে। তিনি দাবি করেছেন, তার কাছে সম্পর্কের সমস্ত প্রমাণ রয়েছে এবং প্রয়োজনে তিনি আইনি লড়াইয়েও যাবেন।

স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আশ্বাস

বিষয়টি নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন ও উত্তেজনা বিরাজ করায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি শুনেছি। এখন পর্যন্ত ছেলে বা মেয়ের কোনো অভিভাবক আমার কাছে সরাসরি আসেনি। তবে উভয় পক্ষ যদি আমার কাছে আসে, তবে আমি বিষয়টি শুনে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করব।”

শেষ কথা

প্রেম, প্রতারণা আর পারিবারিক দ্বন্দ্বে হাফিজা ও শুভর জীবন এখন অনিশ্চয়তার মুখে। একদিকে প্রেমিকার অটুট জেদ, অন্যদিকে প্রেমিকের পরিবারের কঠোর অবস্থান—এই নাটকের যবনিকাপাত কোথায় গিয়ে ঘটবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এলাকাবাসী ও সচেতন মহল মনে করছেন, কোনো অঘটন ঘটার আগেই উভয় পক্ষের বসে একটি মানবিক ও সুষ্ঠু সমাধান বের করা উচিত।